Poems by Saswati Sarkar | Kaurab ONLINE 63/2024

 

কবিতা

শাশ্বতী সরকার

 

দাম্পত্য

 

কতদিন ডাকোনি চোয়াল নামিয়ে

ভুরু শক্ত, গনগনে, ওরই মধ্যে

তোমাকে দেখে নিচ্ছি যা দেখে নেওয়া

কোথায় এখন শাদা, অনাবিল শাদা

কইমাছ ছটফটে জলের গভীরে

অনাদির জাল তাকে কবলে রেখেছে

বৃত্তাকার, ছটফটে জাল

 

গার্হস্থ্য আঁধার দিব্যি লেজ নাচাচ্ছে

উঠে যাচ্ছে গা বেয়ে লম্বা গাছের

একটা কি ভুল বোঝা কখনো কথার

এখন এখানে অল্প আলো জ্বেলে

খেলব কি সারারাত কথা কথা খেলা

 

 

সকালে

 

এখন অভয় দিলে বলি

কোথায় পরীর দেশ মেঘ থেকে দৈববাণী দেশ

দেশের মেঘের মুখ সোনা

শুনবার গোপন সুখ গোপনে গুঙিয়ে

রচনা লেখার মতো বিল-নদী-কাদা

 

গলাভাঙা ডাক আমি কতনা ডেকেছি

বিড়ালের গলাঘষা উবু চিত হয়ে

পেয়েছি মারের হাত মাথার ওপরে

এত বড়ো দানবীয় হাত

 

যেন শিঙিমাগুরের দেশে নবীন, নরম মাছ এল

মাথার রেশম চুলে হাত বোলানোর সুখ

কিছু ঘুম আমারও কি ভাঙে, বেলা ভেঙে যায়

তোমাকে দেখার দুঃখ মনোলীনা না দেখার চেয়ে কিছু বেশি

 

 

আর্তি

 

মনে পড়ে গাভীর তলদেশ থেকে একেবারে মুখ লাগিয়ে খেলাম

কমলার রস চ্যুত হয় ফোঁটা ফোঁটা

প্রথম জাগানো থেকে ঢুলে পড়া

পেরেক থেকে লজ্জাবতী ফুল

তোমাকে পেলে কি আর তোমাকে পাব না

এই একইরকম বরাত এখন সকাল সন্ধে

রাতের সরাসরি চেরি লক্ষ করে হামলে পড়া

আর সেই শুরু থেকে রাত ঝরা ফোঁটা ফোঁটা

 

 

শান্তি

 

আমাদের কারুকাজ ছিল একমাত্র বুনোফুল

অপেক্ষায় থাকা আর ইচ্ছেমতো কাঁটা

জায়মান রোদের গায়েগায়ে বসতে দেওয়া যাকেতাকে

অনেক দূর চলো, একেবারে নিরাময় অবধি

চেরি পর্যন্ত ফুটিয়ে তোলো পর্যটন

কম এক আকাশ সম্পর্কে বলতে বলা

যা এখনও পুবের দিকে স্পষ্ট নয়

ফুটে থাকা রাতের গভীরে লাল শুকফুল

 

 

সংলাপ

 

নাহোক কিছুটা বাতাসই দেখব এসে

কোলপাতা অন্ধকার অন্ধকারের কাছ ঘেঁষে বসে আছে

জ্বলছে ঘিয়ের কেমনতরো প্রদীপ, আলো নাকি ফুল

দুলছে সামান্য দু'দিকে, তখন ব্যথার গায়ে রাখো হাত

 

দোলে এমনিতে শিশিরবিন্দু, তখন কোথাও

শীতে কালো চামড়া, ভাবব কি চক্ষে জল আসে

শিশিরের কাছে আসে কিচিরমিচির

 

ধীরে, অতিধীরে নড়ো ব্যস্ত পৃথিবী, রেডিয়ো

থামিয়ে রাস্তার ঢালুদিকে পেচ্ছাপ সারছে কোনো

ড্রাইভার, মীমাংসা এখানেই যেন, লোলজিহ্বা

শেষ, হাঁফাতে হাঁফাতে ট্রাক নেমেছে বালির খাদানে

 

মমতা এখানে এসে আছে, থাকে কিছুদিন

শালের পাতায় কবে বা কীভাবে নির্মিত শীতের

ফুল সেরে নিচ্ছে ইতিকর্তব্য, কখনো বাদামী

কাঠে, কখনো দুয়ার ঠেলা সবুজে আবার

দেখেছি, শিশুটির তৈলাক্ত গায়ে কাঁদবার আগে তার লালনীল হাসি


 

এখন অভয় দিলে বলি

 

সদ্যপ্রসূতির তলপেটের মতন আকাশ আজ। ছাতিমের গাছভরা ফুল অসুখের গন্ধে ভরিয়ে রেখেছে গাছতলা। আমি জানি, গাছটা সুখেদুঃখে কথা বলেনি অনেকদিন। হয়তো বলবে, যদিবা আবার তার ফুল ফোটানোর মতি ফেরে। ফুলে দুঃখের গন্ধ আমি আকন্দেও পেয়েছি। কিংবা ধুতুরায়।

 

আজ থেকে দশবছর আগে বা পরে লিখলে যেসব কথা বলব তারা প্রত্যেকে একে অপরের কেউ হয়। এখন শরিকি বিবাদে মুখ দেখাদেখি নেই। এখুনি একটা সংবাদ আসতে দাও। দেখবে এবাড়ি ছুটছে ওবাড়ির দিকে। আনন্দ তখনই আসে, লঘু পায়ে, সুচতুর পায়ে, এসে আলগোছে জল খায়, হাতে সোনার বালা আড়াল করে রাখে, তারও বুঝি চোখে পড়ে আমার ঘর ফাঁকা, আজও কেউ আসেনি। ঐটুকু অবহেলার শান্তি, ঐখানে সব নিশ্চিন্তি, শুধু ঐ একবার কথা বলবার, ভালো করে চেয়ে দেখবার প্রার্থনা। তবে যে সে বলল ছুটি না হতেই পাড়া মাতিয়ে আসবে, ধুলো উড়বে নদীর পাড় জুড়ে, এখন কি ছেলেখেলা করবার সময়!

 

অর্থাৎ কিনা, যা লিখি, বলি, করি... সবই আগাগোড়া বদলে ফেলবার অভাবনীয় ঘটনাটাকে চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে চাই। এমনকী চাই, সাক্ষী খুব কম জনে থাকুক। চাই যতকিছু বলবার আছে, তার অনিঃশেষ হাঁ-মুখে জল দিয়ে একটু থিতোতে দিতে। তবে কি মস্ত জঙ্গুলে একটা বটগাছকে চাইছি আমার দুইকাঠার মাপে বনসাই মনোরম করে তুলতে? একেবারেই না। আমার মনে হয়, বিগত প্রায় দু-দশক ধরে আমি, অনেকেই আমাদের আজীবন এই চেয়ে এসেছি, মনোরম তার হাসি কুণ্ঠিত না করুক, প্রসাধন পালটাক কিছুকিছু। আজ অল্প আতর নিয়ো গো!

 

এবার আসি কেন’-র প্রসঙ্গে। মৌমাছি কি ফুলের জাতি বিচার করে? রঙের করে হয়তোবা, সুগন্ধের করে। তবু তারও ক্ষান্তি প্রয়োজন। অনেকদিন, প্রায় গত তিনবছর, গোটা কুড়িটা লেখাও লিখতে পারিনি। ভেবেছি। সে একেবারে যা তা ভাবে ভেবেছি, চেয়েছি, আউড়েছি শতবার, পারলে মুখস্থ করে গিলে ফেলবার তাগিদে মাথায় অনবরত আসতে থাকা লাইনগুলোকে। তারপর শান্ত হতে বাধ্য হয়েছি একসময়। টানা কিছুদিন না লিখে ফের লিখতে বসে দেখেছি, নিজের লেখার আরেক জাতভাই তৈরি হয়েছে, কেবল চটি চুরি করে ধরা পড়বার ভয় তার চোখেমুখে!

 

অনেকটা স্থৈর্য দরকার। যা দশলাইনে লিখতে পারতাম, তাকে দরকার দুটো কথায় বলা বা প্রয়োজনে ঠিক উলটোটা। এই হচ্ছে কেন।

 

পতঙ্গভূক আকাশ হয়তো আজ থামবে না একেবারে, সন্ধে থেকে রাতের কাছে গড়ালে ঠান্ডা হতে পারে কিছুটা।

 

 

 

 

 

 

 কবি পরিচিতি

শাশ্বতী সরকার-য়ের জন্ম ১৯৯২। বাংলা স্নাতকমানকর কলেজ। কবিতা ও গদ্য লেখেন। 'খেয়া', 'বিদুর', 'অহিরা', 'কৌরব অনলাইন', 'তবুও প্রয়াস' সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও ওয়েব পোর্টালে তাঁর কবিতা এ-যাবত ছাপা হয়েছে। 'বিদুর' থেকে প্রকাশিত একমাত্র কবিতার বই 'যেন গান মনে থাকে'