কবিতা

          অনিন্দিতা ভৌমিক

 

          ===

         

 

 

অনিন্দিতা ভৌমিক। জন্ম ১৯৮৬ তে। উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে স্নাতকত্তোর। বর্তমানে রাজ্য-সরকারী দপ্তরে কর্মরত। কবিতা ছাড়াও ব্যক্তিগত ভালো লাগা রয়েছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতি। এছাড়াও ভালোবাসেন একা, উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াতে। দর্শন ও বাস্তব জীবনের টানাপোড়েন – এই দুই উপাদানই অনিন্দিতার কবিতার মূল রসদ।

 

 

 

...এবং নিবিড়

 

ব্যক্তিগত কোনো রাস্তার ভেতর জুড়ে দিচ্ছি

পুরনো গল্পের রেশ

ধূধূ পায়ের ছাপে যাদের অন্ধকার

কিম্বা সমীকরণ নিয়ে

আমরা কখনোই শুদ্ধতার দিকে ছুটে যাই নি একান্তে

অথচ একটা বিলম্বএকটা অস্পষ্টতার কথা ভাবতে ভাবতেই

বৃষ্টি চলছে পাতায়

খুব এলোমেলো শৈলীর ভেতর

শান্তিপূর্ণ হয়ে আসছে অবস্থান

হেঁটে যাওয়ার ভঙ্গি

 

কাঁচের দরজার ওপাশে তখন ভাষার কথা

ছেড়ে আসা দেওয়াল ও তার রোদের কথা

 

যেটুকু শ্বাস ছুঁয়ে যাওয়া থাকে জড়ানো আঙুলে

 

বনৌষধি জাতীয় এসব কথা আমাদের জানা

পাতার কাছে মুড়ে তুলি ব্যাকরণ

শিরা-উপশিরা দিয়ে

আটকে থাকা দুই ডিগ্রীর তাপমাত্রা

যেভাবে ঘুরে আসে মৃদু ড্রয়িংরুমে

আশ্বস্ত হয়

ছায়াবৃত্তের ভেতর নিশ্চিন্তে বসে থাকে

একটু একটু জল ভেসে ওঠার ছবি

 

আপেক্ষিক দূরত্বের ভেতর ফাঁকা রয়েছে যে তথ্যচিত্র তার ঝুঁকে আসা কোণে বাকি

সংখ্যা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে পরিবর্তিত ধারণার মুহূর্ত শেষ অব্দি বিস্মৃতিতে

এসে ঠেকে

 

আর ঠিক ওইভাবেই

পেরেক থেকে খুলে যাচ্ছে কাগুজে সফর  

ঘুমের মধ্যে যাদের হরফ গঠনের প্রস্তাব

আঁশ ছাড়িয়ে

হামেহাল চন্দনের বনে

স্রেফ ভুল নামের ডাক

নিটোল করবী ছুঁয়ে ছুঁয়ে

কথারা কুয়াশায় পড়ে থাকলো

সাময়িক যৌথতায় পড়ে থাকলো গহন আলোর প্রভাব

 

দূর কিম্বা আবছা চেনা গলি

চওড়া দুইধারে ভাঙা এক বিকেলের চিহ্ন       

স্পষ্ট হয়ে ওঠে

যা কিছুটা বিরতি করে রাখো

একতরফা প্রশমিত করতে থাকো

নিহিত আঙুলের মাপ

সুডৌল প্রার্থনার দিনে ঘন হয়ে ওঠার প্রসঙ্গ

 

এইভাবে নরম সকাল

যাবতীয় বর্ণমালার শরীরে বিঁধে থাকছে ধূসর

মাটির দিকে ফোঁটা ফোঁটা জলের ছাঁট

নির্বিকার একটা দেওয়াল

কতদিন মুখ ঘুরিয়ে তুলে আনছে স্পর্শ

তীক্ষ্ণ স্নায়ু জুড়ে

ধারণ করার প্রবণতা

 

হয়তো এসব কথাই আসলে বিগত বছর

লিখতে চাওয়া বহুবার বহুকিছুর ভেতর

উহ্য রাখা নমনীয় ক্ষত 

সহজেই অনুমেয়   

           

গতানুগতিক এই সংখ্যা এই বোঝাপড়া সূত্রে

ছিলেই না কোনোদিন

অক্ষ বরাবর শুধু তাকিয়ে থাকা

আর নিভৃতি লেখার মুহুর্তে

ঝুঁকে আসছে দুমাত্রার পিছুটান

যাদের চোখে কোনো সবিনয় তুলে রাখা নেই

হলুদ পাতার মতো

 

সমস্ত দাগ মুছে দেওয়ার পরেও

আমাদের সন্ধ্যে করছে খুব

নিঝুম অভ্যাসের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে

একা একা বাড়ি ফেরার কথা

যেখানে প্রতিটা বিন্দু থেকে ঝরে পড়া শ্বাস

আর্দ্রতা রাখেনিরাপদ শুভেচ্ছার আঙুল ছাড়িয়ে

গেঁথে দেয় সিল্যুয়েট

 

শর্তহীনতা তো শুধু প্রশ্নের হয়

অযথা হিড়িক কিম্বা ট্যারো কার্ডের সংকেতে   

ঘন হয়ে থাকা

এরপর যাত্রা শুরু হবে

অনাগত গর্ভ থেকে উঠে আসবে বিষন্ন চোখের এক শিশু

 

নরম জলপাই রঙে জিভের স্পর্শ রাখো এবার

নিছক সহনশীলতার জন্যে তুলে দাও সবটুকু নিরাময়

যেভাবে অবাধ জলপতনের শব্দ

আর অনায়াসে ফুরিয়ে যাওয়া যায়

 

অবসর...এমনটা বলতেই উষ্ণ কাপে ফিরে আসছে চুমুক

ইতস্ততঃ ঠোঁটের রিফ্লেক্স আর

উচ্চারণের পাশে গুছিয়ে তুলছি নিজেদের

 

পরিবর্তিত কোনো গঠন নেই অপেক্ষায়

আর তোমার জানালাগুলো

বহুদিন সাদামাটা

ঘষটে হেঁটে যাচ্ছে ছাপোষা অক্ষরে

যেন খুব অগোচর

      খুব ধীর এক শস্যকাল

ফিরে আসে  

ছায়া ছায়া লেখে ঢুকে পড়া বিরতি

হয়তো অন্যকোথাও

অন্যকোনো যৌথ ক্রিয়াপদে

 

হেঁটে যাওয়ার মতো কয়েক ঘন্টা

স্থানীয় উপকথার মধ্যে

খুলে রাখছি চারতলার রোদ

যা শুধুই

ট্যারচা ভাবে নেমে আসা

পুরনো বিকেল

বড়জোর প্রথম লাইনের সহজলভ্যতা

 

ক্ষণস্থায়ী এই গঠনের দায়

আলগা কুচির ভাঁজে

বিলীয়মান

যেন ফিরিয়ে দেওয়ার আড়াল

ভ্রাম্যমাণ দিনে

মনে করতে চাইছে

মনে পড়ার মতো কিছু নির্ভরশীলতা

 

শুধু হেঁটে যাওয়ার জন্যেই কয়েকঘন্টা

 

পরিণত কিছুটা সময় কাটাতে কাটাতে

সম্মতি জানাচ্ছে যেকোন ট্যাক্সির রং

সীমিত স্পর্শ জুড়ে থাকছে সমস্ত পায়ের ছাপ 

 

ও নিবিড়

ওগো অনিবার্য ছেঁড়া পাতা

তুমিই শুধু নৌকার কথা লিখছ

তুমি এক কাঠামোগত নিরাময়

এইসব ধোঁয়া ওঠা আবহে

 

অতঃপর এক নিরাময় জীবন

পলকে অপলক তুলে ধরছে

বিগত দুপুরময়

আর তুমি ধৈর্য্য রেখেছ নিজস্ব চুরমারে

দেওয়াল ঘড়িতে এসে দাঁড়িয়েছ

কিছুটা অসুখের মতো অনুৎপাদকের মতো

কাঁধ ছাড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছ

যেদিকে অহরহ দুচোখ থামে

যেটুকু বি্ষাদ কেটে যায় গোটা একটা চাদরে

 

ধাতব শব্দের ভেতর আঙুলগুলো শীর্ণ। চাউনি বেয়ে জমে ওঠে অন্য তরলে। বিষয়ের

ভেতর নড়ে বসে নিঁখুত বাক্যের বিরতি। প্রবণতা মুলতুবি রাখে। অস্পষ্ট স্রাবের গন্ধে

জুড়ে দেয় প্রাচীন অভ্যাস। হয়তো বা সমস্ত শিরা – জট পাকানো – নাভির আরেকটু

নীচে...

 

চৌরাস্তার মোড়ে তখন বড়জোর আলো পড়ছে। অফহোয়াইট। ছাড়া ছাড়া শুকনো

মোটিফ। নিজস্ব মনসুন...ঢুকে পড়ছে চুল্লুর গলিতে। 

 

আর এইমাত্র কিছু কথা ভাবলেশ হয়ে গেল

অসুখ জমে থাকলো কোনো

আপাত দোষারোপ ছাড়াই

তুমুল ক্ষারতা নিয়ে 

 

বাকিটুকু মনখারাপ জড়ো করছি এবার

নোনাধরা হাতের ভেতর

ফুরিয়ে যেতে চাওয়া শব্দের ভেতর

গুঁজে দিচ্ছি একটা পর্যায়

যৌথতার কাছে সাময়িক চিহ্ন হয়ে থাকা

 

হতে পারে এই সময় একটাও বৃষ্টি নেই কোথাও

এবং পাশাপাশি নামিয়ে রাখা দ্বিধার গায়ে

বেঁকেচুরে যাচ্ছিল যে উত্তাপ যে অনুপাত

তাদের সামগ্রিকভাবে সাজিয়ে ফেলা হচ্ছে

ছায়াহীন আনততল বরাবর

 

পাঠক, এই মুহূর্তে আমরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ভাবছি আপনাকে নিয়ে

ভাবছি বিচলিত বোধ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে মেপে মেপে দেখছি তার শুদ্ধতা স্তন ফুটে

ওঠার প্রশ্নে যা পরিবর্তিত হতে থাকে স্পর্শ ও প্রক্রিয়ায় আর সাবলীলতার কথায়

আমরা উন্মুক্ত করে দিই যাবতীয় নির্মাণঅনিচ্ছা থেকেও দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা

 

অথচ সব চরিত্রই তো সমবেত সংলাপ মাত্র গোটা একটা জীবন উঠে আসছে সুঁড়িপথ

দিয়েশেষবারের মতোনুনে-মাংসে-ঠোঁটে-মজ্জায়

 

পাঠক, এই যৌথতা নির্মাণে আপনিও এক আয়ুষ্কাল আমাদের চোখ টানছে কোমলতার

কোনো ফ্যাকাসে ব্যবহারে এবং দৃষ্টিজনিত শর্তকে ছুঁড়ে ফেললেই আপনি বুঝতে

পারবেন যে, আদতে এই মুহূর্তে কোনো দৃশ্য নেই আমাদেরআমরা কেবল দৃশ্যের

মতো করে লিখে যাচ্ছি নিজেদের পুরনো বাড়িটার কথা

 

===