সমসাময়িক
বাংলা গদ্যের পাঠচক্র/
ঢাকা (বসন্ত, ২০১৬)
KAURAB INTERNATIONAL READING
SERIES EVENT No. 10
আক্ষরিকভাবেই
মাত্র দেড়দিনে
সব যোগাযোগ আর
আয়োজন একত্রিত
করে ঢাকা শহরের
বারিধারায় অনুষ্ঠিত
হয়ে গেল ‘১০ম কৌরব
পাঠচক্র’। সম্পূর্ণ উদ্যোগ
যদি কবি ও লেখক
মেঘ অদিতি এবং
ঔপ্যনাসিক বাবলী
হক, যিনি তাঁর বাড়িতে
সবাইকে আদর ও আপ্যায়নে
ভরিয়ে দিয়েছিলেন,
না নিতেন, এমন আয়োজন—সম্ভব
হত না। কারণ দুটো—এক. আমার
বাংলাদেশ সফর শেষ
হয়ে আসছিল এবং
দুই. ঢাকায় কবি
বা গদ্যকার যাঁরা
আছেন, তাঁদের কয়েকজনকে
এক জায়গায় জড়ো
করার অক্ষমতা।
আমি দ্বিধাগ্রস্ত
ছিলাম, এত অল্প
সময়ে এমন একটা
বড়ো কাজ কীভাবে
করা সম্ভব! কিন্তু
সত্যি বলতে কী,
হয়ে গেল। এবং অসাধারণ
সুন্দর এবং সুচারুভাবে
হয়ে গেল। সুযোগ
হল এক ঝাঁক প্রতিষ্ঠিত
ও উদীয়মান সাহিত্যিকের
লেখা শোনার।
উপস্থিত ছিলেন
ইশরাত তানিয়া,
সুমী সিকান্দার,
ফারহানা রহমান,
চৈতী আহমেদ, মেঘ
অদিতি, বাবলী হক,
শামীমা জামান,
মহিম সন্ন্যাসী,
শিমুল সালাহ্উদ্দিন
এবং স্বরলিপি।
এঁরা কেউ কেউ কবিতা
ও গল্প দুই-ই লেখেন,
কেউ কেউ শুধুই
গল্প আবার। কেউ
কেউ শুধুই কবিতায়।
লেখা শোনার আগে
এঁদের প্রত্যেকের
কাছে দুটো প্রশ্ন
রেখেছিলাম—পেশা কী
এবং লেখলিখির অনুপ্রেরণা
কী?
বাবলী হক
ও সুমি সিকান্দার
গল্প পড়ছেন
মেঘ অদিতি পাঠচক্রের
কেন্দ্রক সুদেষ্ণা
এঁদের উত্তর
থেকে একটা সমাজ-চিত্র
ফুটে উঠল। কেউ
সাংবাদিক, কেউ
বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক, কেউ পত্রিকার
সম্পাদস, কেউ ব্যাবসা করেন
আবার কেউ কেউ পুরো
সময়ের লেখক। আর
অনুপ্রেরণা জানতে
চেয়ে উঠে এল নানান
বিষয়। ইশরাত বললেন,
তাঁর লেখালিখির
অনুপ্রেরণা শূন্যতা,
যা পুরোপুরি ভরিয়ে
তোলা না গেলেও
কিছুটা হয়তো ভরিয়ে
তোলা যায়। ইশরাত
পড়লেন গল্প—‘বর্তমান
অবর্তমানে’। চৈতীর ক্ষেত্রে
সেটা আশেপাশে ঘটে
যাওয়া ঘটনা। তিনি
পড়লেন গল্প—‘মোঁয়াপ’। সুমীর বিষয়টা
অন্য। তিনি আগে
গান গাইতেন। শারীরিক
কারণে গান বন্ধ
করে দিতে হয়। গান
বন্ধ করে দেবার
বেদনাই তাঁর লেখার
অনুপ্রেরণা। তিনি
পড়লেন গল্প—‘লিপস্টিক’। ফারহানার ক্ষেত্রে
তাঁর বাবা এবং
জীবন লেখালিখির
অনুপ্রেরণা। তিনি
পড়লেন দুটি কবিতা—‘আমি লাবণ্য
হতে চেয়েছিলাম’ এবং ‘মুক্তিপণ’।
চৈতী
ও ইশরাত
সবার
দেখভাল এবং অতিথি
সৎকারে ব্যস্ত
বাবলী বিস্তর দৌড়ঝাঁপের
মাঝখানেই প্রশ্নের
উত্তরে মজা করে
বললেন, ‘আমার ঘরে সারাদিন
বেজে চলা কলিংবেল
আমাকে দিয়ে লিখিয়ে
নেয়!’ তিনি পড়লেন গল্প—‘দরবেশ
সকাল’। শামীমা
আর মহিম, উভয়ের
ক্ষেত্রে অন্যের
খারাপ লেখা তাঁদের
লেখার অনুপ্রেরণা।
শামীমা পড়লেন গল্প—‘চিত্রাবলী’ এবং মহিম
পড়লেন দুটি কবিতা—‘সৌদি এয়ারলাইনস্’ এবং ‘চাঁদমারি
রোড’। শিমুল জানালেন
সম্পর্ক, প্রেম
এবং মানুষ তাঁর
লেখালিখির অনুপ্রেরণা।
তিনি পড়লেন ‘সংশয় সুর’ এবং ফেসবুক
নোট থেকে কিছু
কবিতা। স্বরলিপি
শুধু লিখতে ভালোবাসেন
বলে লেখেন। তিনি
পড়লেন গল্প—‘লঞ্চডুবির
পর’। শেষে পড়লেন মেঘ
অদিতি, যিনি তাঁর
লেখার রসদ নিজের
ভেতর থেকেই সংগ্রহ
করেন। তিনি তাঁর
‘প্রবেশাধিকার
সংরক্ষিত’ বই থেকে
কিছু কবিতা পড়ে
শোনালেন।
প্রায়
৪ ঘণ্টার শোনা-আড্ডা-গল্পের
ভেতর থেকে বেঁচে
থাকার লড়াই, জীবনকে
নানান ঘাত-প্রতিঘাতের
মধ্যেও উপভোগ করার
বাসনা আর তুমুল
রাজনৈতিক ও সামাজিক
টানাপোড়েনের আঁচে
থেকেও সক্রিয় ভাবনার
কথাই উঠে এল। নানান
কোণ থেকে মানুষকে
দেখার সুযোগ বা
উৎসাহ এইসব বলিষ্ঠ
লেখকদের সবার ভেতরেই
বিদ্যমান, তাঁদের
লেখাগুলো সে কথাই
বলেছিল।
সুদেষ্ণা মজুমদার