HOMEPAGE

 

 

কৌরব অনলাইন ধারাবাহিক সংযোজন-৬

ফেব্রুয়ারী ৮, ২০১৬

 

সূচি

   

কবিতা

অরূপরতন ঘোষ

 

=== 

 

 

 

অরূপরতনের উজ্জ্বল প্রকাশ একুশ শতকের একেবারে গোড়ায়, এক কলকাতা বইমেলায়, মর্ত্য (২০০৫) নামের একটা চটি বইয়ের মাধ্যমে। বইটা সকলের নজর কাড়ে ঘন কবিত্ব ও চিত্রকল্পের অভিনবত্বে। এক দশক পেরিয়ে অরূপরতন ওঁর প্রজন্মের এক বিশিষ্ট কাব্যস্বর। অন্যান্য কবিতার বই  ফেরিঘাট(২০০০), লং ড্রাইভ (২০০৭) এবং ধ্বংসস্তূপ (২০০৯)উপন্যাসঃ সূর্যহীন (২০০৬),অনুবাদঃ শেষ দীর্ঘশ্বাস (লুই ব্যুনিউয়েল-এর আত্মজীবনী) এবং নোয়া নোয়া পল গগ্যাঁর তাহিতির জার্নাল)কবিতার পাশাপাশি অরূপরতন এক স্বাধীন চলচ্চিত্রকারও। জন্ম ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৭৭

 

 

কুহক

 

এক.

তোমার অসীমত্ব ধরা পড়ছে

খানিক দূরত্বে নিহিত নৌকা, যখন সাবলীলতায়

কোনো বিদেশী শব্দ নেই

এই বিশ্বাস হয়-

 

দুই.

 

রাত নিষ্প্রভ, তুমি পর্দাসীন হও

মায়াগুলি জড়িয়ে ফ্যালো রাংতায়..

ওই যে ছেলেটি, বিয়োগান্ত হেঁকে গেল গলিতে

নৈশপ্রহরী, নেপালী পাড়ায় থাকে আর

জোরে বাঁশী বাজায়

 

 

সুবাস

আজ অনেক সরলতা হোলোহোলো বিমূর্ত মূর্তির পাশে বসাধূপি গাছের নিচে, ক্রমান্বয়ে গড়িয়ে যায় গুঁড়ো দুধ ও চাল মাপার কৌটোকিছুক্ষণ অনাদি মেঘ ভেসে থাকে

 

এমন কবিতার সৌন্দর্যলেখকের রীতি-নীতি এবং ব্যক্তিগত চাহিদার বাইরে যে অস্তিত্ব, জাদুঘরমুখী ও একান্তই পলায়নপর তাকে কৃপার দৃষ্টিতে দেখিএকই সঙ্গে দেখি বাগানের ফুটেজে ফুল, গন্ধ আছেবেল ফুল কুড়িয়ে নাকে শোঁকার মত একটা বিকেল এসেছে আজ

 

ঘরের মার্বেল এসে গায়ে লাগছেঠাণ্ডা ঘরের আবহাওয়াআসবাবপত্রের গায়ে লাগছেসন্ধের আগেই ফিরে আসছেন অরুণ বাবু, অফিস সাঙ্গ হোলো তবে;

 

 

সূর্যাস্ত

 

লীনার আদলে শুয়ে আছে

মেঘের মধ্যে বাজাজ কোম্পানীর স্কুটার

ও তার যন্ত্রাংশসমেত পূর্ণ

বিজ্ঞাপনী শক্তিঅদূরে

নদীর জলে সেতু থেকে লাফিয়ে

পড়ছে ছেলেরা

 

 

অঙ্কনবিদ্যা

 

অতিরিক্ত কিছু পাখি দেখি আজকের জলাশয়ে

 

বিশ্বনাথবাবু কী রকম মানুষ, অদ্বিতীয় কিনা

এই প্রশ্নে, ভ্রমে

জলে নিজেরই কি ছায়া দেখি

আজ  সেতুর উপরে আচম্বিতে

মুখ থেকে খসে যায় মাংসখণ্ডখানি!

 

 

যাদুঘর

 

আমার বাবা আমার জন্য ত্যাগ করেছিলেন

সমস্ত কিছুই ..

আমি আমার ছেলের জন্য কিছুই

ছাড়িনি-

যেমন মদ, জুয়া, পাশাখেলা..

 

এর মধ্যে দিয়ে আমার স্বার্থপর

চরিত্রটি ধরা পড়ে

 

নারী, সবুজ ময়ূরী.. চোখের সামনে দোলে

 

 

নকশা

 

.

 

বিন্যস্ত করো লেখা, শব্দের

একপাশে স্থির বসে থাকো

বাক্যবিন্যাসের দ্বিধায়

 

য্যানোবা অদূরে উনোন জ্বলেছে, হিমাঙ্কের নিচে গ্যাছে

সমূহ বিলাপ

 

.

 

শব্দের বাইরে প্রাচীর বুনেছে রোদচশমা

বাইরে বুনেছে অনেক হাতমোজা ও তাদের

শরীর বেয়ে দুএকরকম হাতঘড়ি

 

কোথায় চোল্লে এত রাতে? রাত নিঝুম, উনি

দোতলায় গ্যাছেন, কত টুপি হাতমোজা

ঝরে পড়ছে দূরের টবে..

 

 

পার্ক স্ট্রীট

 

সমস্ত নরম মাধবী ঢুকে যাচ্ছে

একটি করুণ মুদ্রায়

 

কর্মপদ্ধতি, শঙ্খচিলের ডাক

পাশাপাশি দুজন মানুষের হেঁটে যাওয়া

স্ত্রীয়াকীর্ণ বিকেলে

পাশে মিউজিক- দুএকটা বরফ পড়েছে

 

ওই দিনই করিডোরে

মানানসই অক্ষরের পাশে শেষবার জ্বলে ছিলো লীনা

উজ্জ্বল ও তারিখহীন হয়ে

 

 

ভোররাতে

 

এবার বাইকে স্টার্ট দিলামচাঁদ ওপরেমিথ্যে কথাসারারাত ধরে যেখানে এলাম সেখানেই সূর্য উঠলো..

 

স্লোয়ার মাখা ধুলোয় ভোর হচ্ছে..

 

শীতের জঙ্গলে ঢুকছে রাজপথ.. পাহাড় দুপাশে - এই ধাবায় একটু থামি  চা নয়, এইখানে মদ পাওয়া যায় শুধু! এই ধাবায় মদই খাই তালেচৌকো খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে ভোরের অরণ্য দেখি.. ভারী ট্রাকে চেপে মিলিটারি চলেছে সামনে.. ওদের এগোতে দিই পথে

 

বোম্বে রোড ধরে.. বোম্বেরই দিকে

 

 

 

মুহূর্ত

 

দুধের মধ্যে অজ্ঞাতে ঘন ও শক্ত হয়েছে

মিস্ত্রীদের শারীরিক আগ্রহ

দুপুরের দিকে আমিও খানিকক্ষণ

বাদামী তেলরঙ দেখেছি

 

আলোচনায় আরেকবার উঠেছে

সুরিয়া টিউবের কথা,

বাসস্টপে.. প্রফুল্ল কেবিনের আলো

তুষারবিন্দুর মত একেকটা আসবাব

 

ছুঁলেই সন্ধ্যা নেমে আসে!

 

 

 

অসুস্থতা বিষয়ক চূর্ণপদ

 

. স্নেহ

  যখন দয়া কার্যত নিভে যায়, লো হাওয়ায়

  আরও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে তোমার হাত

 

. দুঃস্বপ্ন

  বর্ষায় পুরুষ ঘোড়াটির মৃতদেহ ফেলে রাখা

  প্রান্তরে শকটযান, আজ শূন্য গতিময়

 

. জ্বর

   যথাযোগ্য পোষাকে এসেছি পিতার বিবাহে

   সুন্দর ঝর্ণার পাশে সাজিয়ে রেখেছি কাপ, ডিশ ও ধারনাসমূহ

 

. রাস্তায়

  সায়ত্ব শাসনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয় এসময়

  ফলত, এসময় ভ্রূকুটিরও উত্তর নেই কোনও

 

. গার্লফ্রেন্ড

   সেবাসদনের দেওয়ালে বিরামচিহ্ন দেখি

   সোদপুর স্টপে নেমে দেখি ডাক্তার আসেনি তখনও

 

===

Copyright © 2016 Arupratan Ghosh     Published 8th February, 2016.